সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় বাংলাদেশ পুলিশের এক কর্মকর্তাকে আটক করেছে বিএসএফ। ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান। তিনি শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি।
শনিবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হাকিমপুর সীমান্ত চৌকির কাছ থেকে তাকে আটক করে বিএসএফ। দেশটির সংবাদমাধ্যম ‘ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়া’ জানিয়েছে, ওই পুলিশ কর্মকর্তা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করছিলেন।
বিএসএফ সূত্র জানায়, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে নিয়মিত টহলের সময় সন্দেহজনকভাবে সীমান্ত পেরোতে দেখে তাকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরিফুজ্জামানের বিরুদ্ধে ভারতের ১৪ (এ) ধারার ফরেনার্স আইন এবং পাসপোর্ট আইনের ১২ ধারায় মামলা করা হয়েছে। রোববার (২৪ আগস্ট) তাকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, বিএসএফের হাতে আটক মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) পদে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি নীলফামারীর শাহীপাড়া এলাকায়।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারী কমিশনার (এসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে তাকে ময়মনসিংহে এপিবিএন-২ এ বদলি করা হয়। তবে গত বছরের ১৪ অক্টোবর থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সেই থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।
বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা আটক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাকডাঙ্গা বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার কামরুজ্জামান।
তিনি জানান, বিএসএফের হাতে এক বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা আটক হওয়ার বিষয়ে তদন্ত চলছে।
এদিকে গত বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু সাঈদ। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি।
আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় গত ১৮ আগস্ট রংপুর মেট্রোপলিটন আমলি আদালতে হত্যা মামলা করেন তার বড় ভাই রমজান আলী। ওই মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়।
উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন— তৎকালীন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, রংপুরের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, উপপুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান, সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরান হোসেন, থানার ওসি রবিউল ইসলাম, পুলিশের এএসআই সৈয়দ আমীর আলী ও সুজন চন্দ্র রায়কে।
এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামিম মাহফুজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ মণ্ডল, গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান রাসেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ, বেরোবি ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ প্রসিকিউশন থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এ মামলায় ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত এই মামলায় পুলিশের সাবেক এসআই আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ও ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী আকাশ গ্রেপ্তার রয়েছেন।